ব্লগ পোষ্ট : ব্লগার ফারুক :
কলেজের কেরানী পদে চাকরি করে গত কয়েক বছরে গড়েছেন কোটি টাকার সম্পদ - নেপথ্যে রয়েছে চাঞ্চলকর তথ্য। ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগের আমলে স্হায়ীয় নেতা ও এমপির ছত্রছায়া গড়ে তুলেছেন নানান অপরাধের সম্রাজ্য। তাদের এই অপরাধ সম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য চিত্র আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
এই ঘটনাটি কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার দেবীচরণ এলাকার আব্দুর রাজ্জাক ও তার পরিবারের। আব্দুর রাজ্জাক পেশায় একজন কলেজ কেরানী হলেও গত কয়েক বছরে গড়ে তোলাছেন কোটি টাকার সম্পদ - এ যেন আলাদীনের চেরাগ।
একজন কলেজ কেরানী ১২/১৩ হাজার টাকা বেতন পেয়ে যেখানে পরিবার চালানো কষ্ট সাধ্য সেখানে আব্দুর রাজ্জাক কিভাবে এতো টাকার মালিক হলেন? সেই প্রশ্নের উত্তর আমরা খুঁজার চেষ্টা করবো
তবে তার আগে আমাদের জানা দরকার কে এই আব্দুর রাজ্জাক এবং কি তার পরিচয় । এ জন্য আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে বেশ কয়েক বছর আগে। ১৯৫০ সালের দিকে উলিপুর থেকে আব্দুর রাজ্জাকের মা রহিমা বেগম ও তার পিতা কছর আলী রাজারহাট আসেন কাজের সন্ধানে, পরে রাজারহাটের দেবীচরণ এলাকায় মন্ডল পরিবারের ঠাই মিলে তাদের।
এরপর থেকে মন্ডল পরিবার ও আশে পাশের বাসা বাড়িতে কাজ করতে থাকেন রহিমা বেগম ও তার স্বামী কছর আলী। তৎকালীন সময়ে মন্ডল পরিবারের বেশ সুনাম ছিল তাই রহিমা বেগম ও কছর আলী অনেকের কাছে পরিচিত হতেন থাকেন। সেই সুযোগ টা কাজে লাগিয়ে রহিমা বেগম ছক আকতে থাকেন কিভাবে আশে পাশের মানুষের মূল্যবান সম্পদ মেরে দেয়া যায়।
ঠিক কিছু বছর যেতে না যেতে রহিম বেগমের আসল রুপ বেরিয়ে আসে। প্রতিবেশি মৃত তমিজন বেগমের সাথে প্রতারণা করে ১ জোড়া স্বণের কাণের দুল ও ১২ টি স্বণের কবজ আত্মসাৎ করেছিলেন আব্দুর রাজ্জাকের মা রহিমা বেগম।
পরবর্তীতে সেই স্বর্ণের জিনিস গুলো ফেরত দেয়ার কথা থাকলে সেগুলো আর ফেরত দেননি। বেশ কয়েক বছর পর স্বর্ণ চুরির ঘটনাটি ধামাচাপা পড়লে আবারো রহিমা বেগম তমিজন বেগমের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ধার নেন। পরে রহিমা বেগম প্রতারণা করে তমিজন বেগমকে ধারের টাকার পরিবর্তে তৎকালীন সময়ে কয়েক বান্ডেল লটারি টিকেট ধরিয়ে দেন।
তমিজন বেগম এতোটাই সাদা মনের মানুষ ছিলেন যে তিনি বুঝতেই পারেননি সেগুলো লটারির টিকেট।
লোকমুখে শোনা যায়, এই রহিমা বেগম একই এলাকার ব্যাবসায়ী সাহের তেলী নামের এক ব্যাক্তিকে দাওয়াতের কথা বলে তার বাড়িতে এনে টাকার ব্যাগও নাকি মেরে দিয়েছিলেন।
এবার ফিরে যাবো আব্দুর রাজ্জাকের বড় ভাই ওয়াহেদ আলীর জীবনিতে। বড় ভাই ওয়াহেদ আলী, তার কর্ম জীবনে বেশির ভাগ সময়েই কেটেছে , ভারতীয় পণ্য চোরাকারবারি ব্যাবসায়, যেহেতু সীমান্ত থেকে চোরা পণ্য কিনতেন ওয়াহেদ আলী তাই মাঝে মধ্যে বিডিআর ও পুলিশের দৌড়ানিও খেতেন। এভাবেই বেশ কিছু টাকা পয়সার মালিক হন ওয়াহেদ আলী, পরে ছোট ভাই আব্দুর রাজ্জাককে একটি বেসরকারী কলেজের কেরানী পদে চাকরি নিয়ে দেন।
তারপর ওয়াহেদ আলী নিজেই হয়ে ওঠেন একজন প্রেমিক পুরুষ। যদিও ওয়াহেদ আলী ৩ সন্তানের জনক কিন্তু তার চরিত্রে লুচ্চামির দাগ রয়ে গেছে।
গত ২০১২ সালে এই ওয়াহেদ আলী প্রতিবেশি আফরোজা বেগমের সাথে পরকীয়া লিপ্ত হন। লুচ্চামি এবং পরকীয়া করতে গিয়ে এলাকাবাসীর তাড়া খেয়ে লুঙ্গি ধান ক্ষেতের আইলে রেখেই পালিয়ে যান ওয়াহেদ আলী। এরপর থেকে ওয়াহেদ আলীকে এলাকায় কেউ কেউ ল্যাংটা নামেও ডাকেন। শেষ পর্যন্ত লুচ্চা ওয়াহেদ আলীর কারণে আফরোজা বেগমের সংসার সেখানে আর বেশি দিন টিকে নাই।
এবার ঠান্ডা মাথার মাষ্টার মাইন্ড আব্দুর রাজ্জাক নিয়ে কয়েকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরবো, যেটা শোনার পর আপনার চোখ কপালে উঠবে? এই আব্দুর রাজ্জাক বেশ কয়েক বছর আগে " মন্ডলের বাজার ট্যাকনিক্যল স্কুল এন্ড কলেজ " নামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করেন।
ঐ সময়ে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সহ সকল পদে চাকরির নিয়োগের কথা বলে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন বিভিন্ন জনের কাছ থেকে । গত কয়েক বছর যাবত শিক্ষা প্রতি্ষঠানের কার্যকম বন্ধ হওয়ায় অনেকে টাকা ফেরত চাইতে শুরু করেন । এরেই মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক বেশ কয়েক জনের টাকা ফেরতও দিয়েছেন ।
তবে ধারণা করা হয় এখনো দুই এক জন তার কাছে টাকা পাবেন, তবে রাজ্জাকের প্রতারণাটা একটু ভিন্ন ছিল যার কারণে গ্রামের সহজ সরল মানুষ গুলো তার চালাকি বুঝতে পারেন নাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করার পর আবদুর রাজ্জাক নিয়োগের কথা বলে যে টাকা গুলো নিয়ে ছিলেন ঐ টাকা দিয়ে সে বিভিন্ন এলাকায় সুপারি বাগান বন্ধন নেন এবং সুপারি ব্যাবসা শুরু করেন।
মুলত ঐ সময়ে তার ব্যাবসার পুরো টাকা টাই ছিল প্রতারণার টাকা। এভাবে ৮/১০ বছর অন্যের টাকা দিয়ে ব্যাবসা চালাতেন আব্দুর রাজ্জাক। তা না হলে কিভাবে একজন মানুষ কলেজ কেরানী পদে সামান্য টাকা বেতন চাকুরী করে এতো কিছু করা সম্ভব হয়?
যেহেতু চুরি চা্ট্টা এবং প্রতারণা করা তাদের পারিবারিক শিক্ষা সেহেতু আবদুর রাজ্জাকও আর থেমে থাকেন নি সেই শিক্ষা থেকে। দিনের পর দিন এলাকার সহজ সরল মানুষ গুলোর সাথে মেতে উঠেছেন অন্যায় অবিচারের খেলায়।
এই আবদুর রাজ্জাক ও তাই বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জনের জমি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে। এলাকায় তারা এতোটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন যেন যে তাদের কাছ থেকে রেহাই পান নি একটি হিন্দু পরিবার।
গত ২০১৭ সালের দিকে রাজ্জাক ও তার বড় ভাই মিলে " সুন্দর গ্রাম পুটিকাটা " এলাকার শ্রী হেমন্ত চন্দ্র রায়ের ৪ শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখল করে নেন। এটি নিয়ে স্হানীয় ভাবে বেশ কয়েকবার শালিশ দরবার হলেও এখন পর্যন্ত সেই জায়গা ফেরত দেন নি আব্দুর রাজ্জাক ও তার বড় ভাই ওয়াহেদ আলী।
শুধু এখানেই শেষ নয় - আরেক প্রতিবেশি শরিফুল ইসলামও ভুক্ত ভোগী হয়েছেন এই রাজ্জাক পরিবারের কাছ থেকে। গত কয়েক বছর ধরে শরিফুল ইসলামের নিজের কেনা সম্পতির বেশ কয়েক শতাংশ জায়গা দখল করে নেন রাজাক ও ওয়াহেদ আলী।
পরে শরীফুল ইসলাম নিরুপায় হয়ে কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন, এরপর রাজ্জাক পরিবার সেই জায়গার কিছু অংশ ছেড়ে দিলেও, বেশির ভাগ অংশ এখন পর্যন্ত দখল করে রেখেন আব্দুর রাজ্জাক ও ওয়াহেদ আলী।
এই তো গত কয়েক মাস আগে আব্দুর রাজ্জাক ও তার সাঙ্গো পাঙ্গো মিলে ভুক্তভোগী শরীফুল ইসলামকে আটক করে টাকা পয়সা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেন। পরে শরীফুল ইসলাম বাদি হয়ে কুড়িগ্রাম থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলার জেরে আবদুর রাজ্জাক ও তার বড় ভাই ওয়াহেদ আলী বেশ কয়েকদিন জেল খেটেও এসেছেন ।
এই রাজ্জাক পরিবার টি আশে পাশের প্রতিবেশিদের সঙ্গে কেমন আচারণ করেন তার আরেকটি জলন্ত প্রমাণ।
এই তো গত কয়েকদিন আগে এলাকায় ভারী বর্ষণের কারণে অন্তত ২০ টি পরিবার জলাবদ্ধতার শিকার হন, আর এর পিছনে এই আব্দুর রাজ্জাক দায়ী কারণ আব্দুর রাজ্জাক একটি সরকারি কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। যার কারণে পানি দ্রুত নিষ্কাশন না হওয়া ২০টি পরিবারের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়।
বর্তমান এই এলাকাতে কেউ যদি রাজ্জাক পরিবারের অন্যায় ও জবর দখলের বিরুদ্ধে কথা বলে তাহলে তাকে মিথ্যা মামলা ও মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। তার এই হুমকি থেকে আমি নিজেও বাদ যাই নি! এই অনুসন্ধানী তথ্য গুলো সংগ্রহ করার সময় কালে আমার বাবাকে পথ আটকিয়ে হুমকি দিয়ে বলে আমাকে নাকি ফেরে ফেলবে।
এই সব হুমকি ধামকিকে পরোয়া না করেই আবদুর রাজ্জাক ও তার পরিবারের সকল অপকর্মের তথ্য চিত্র আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। সেই সাথে এই পোষ্টটি সবাই বেশি বেশি শেয়ার করবেন যাতে করে, বাংলাদেশের সকল প্রশাসনের নিকট পর্যন্ত পৌঁছায়।
পরিশেষে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে এতোটুকু চাওয়া অপরাধ সম্রাজ্যের দুই রাজা আব্দুর রাজ্জাক ও তার বড় ভাই ওয়াহেদ আলীকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি দেওয়া।
সবাই সুস্থ থাকবেন ভালো থাকবেন।
.